মোঃ রেজাউল করিম, রাজশাহী বিভাগীয় প্রধানঃ
জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা বিভেদের বাংলাদেশ চাই না। মানবিক ও সাম্যের বাংলাদেশ চাই। সেই বাংলাদেশ গড়তে দেশবাসীর ভালবাসা চাই, সহযোগিতা চাই। তাদের পাশে চাই। আমরা কথা দিচ্ছি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে যুবকদের দেশ গড়ার কারিগর বানাবো। নারীদের যথাযোগ্য সম্মান দিবো। এই দেশে আর কোন ষড়যন্ত্র হতে দিবো না। জীবন দিবো তবুও কারো লালচক্ষু দেখাতে দিবোনা।
৩ জানুয়ারি শুক্রবার নাটোরের নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারী কলেজ মাঠে ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জেলা আমীর ড. মীর নুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক সাদেকুর রহমান সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন।
কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দীন ও মো. মোবারক হোসেন। সম্মেলনে অতিথি বক্তা ছিলেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, রাজশাহী মহানগরী আমীর ড. কেরামত আলী, রাজশাহী জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল খালেক, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর আবুজার গিফারী, নওগাঁ জেলা আমীর মাওলানা আব্দুর রাকীব, পাবনা জেলা আমীর আবু তালেব মন্ডল।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ আমাদের সকলের প্রিয় জন্মভূমি। সব মানুষ তার জন্মভুমিকে তার প্রাণের চেয়েও ভালবাসে। কারণ সংশ্লিষ্ট দেশে তাকে আল্লাহ তায়ালা পয়দা করেছেন। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন বিশ্ব নবী মুহাম্মাদুর রাছুল্লাহ সা.) মক্কাতেই তার জন্ম হয়েছিল। জীবনে দুইবার তিনি কেদেছেন। একবার রাছুলকে হত্যা করার চূড়ান্ত ফয়সালা হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মক্কা মুকাররামা থেকে মদিনা মুনাওয়ারায় যেদিন হিজরত করছিলেন। আরেকবার বিজয়ের বেশে মক্কায় ফিরে আসার সময়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার এই দেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছেন তারা আমানতকে খেয়ানত করেছেন। আমানতের মর্যাদা তারা রক্ষা করেননি। সেবকের কথা বলে ক্ষমতায় এসে তারা মালিক হয়ে বসেছেন। কম বেশি সবাই এই জাতিকে কষ্ট দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশিকষ্ট দিয়েছে গত সাড়ে ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার। সব মানুষের গায়ে হাত দিয়েছে। আমাদের সেনবাহিনী দিয়ে শুরু করেছে, আর আমাদের বুকের সন্তান যুবক-যুবতিদের দিয়ে শেষ করেছে। ক্ষমতায় আসার পর তারা একটার পর একটা হত্যাকা- সংগঠিত করেছে। সর্বশেষ ২০০৪ সালে ৫ আগস্ট দিশেহারা হয়ে পালালো; সেইদিন পর্যন্ত তারা গণহত্যা চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে খুন করেছে। ৩৪ হাজারের মতো মানুষকে তারা পঙ্গু করেছে। ৪ শ’র উপর দুই চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়ে গেছে। এই দুনিয়ার সৌন্দর্য্য আর তারা দেখবে না। সাড়ে ৭শ’র উপর তারা এক চোখ হারিয়ে বাকি চোখ নিয়ে তারা জীবিত আছে। ৩৪ হাজার মানুষ তারা জীবনের তরে পঙ্গু হয়ে গেছে। ৩শ’র বেশি মানুষ মেরুদন্ডে গুলির আঘাতে প্যারালাইজ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। জীবনে আর বসতে পারবেনা। দাড়াতে পারবেনা। নিজের হাতে নিজের কাজ করতে পারবেনা। এমনকি নিজের হাতে আল্লাহর দেওয়া রিজক তুলে খেতে পারবেনা।
এত মানুষ হাসপাতালে কাতরায়। এরা এত নিষ্ঠুর ছিলো, এত নির্মম। নিজের দেশের ট্যাক্সের কেনা অস্ত্র জনগণের বুকে ফেলেছে। আমাদের সন্তান আবু সাঈদ গভীর আস্থা এবং আত্মপ্রত্যয় নিয়ে সেই ধারণা দিয়ে বুক পেতে দিয়েছিল যে আমার দেশের মানুষ আমার বুকে গুলি করবেনা। সে বলেছিল যে বুকের ভিতর তুমুল ঝড় বুক পেতেছি গুলি কর। তিনটি গুলি করে তাকে শেষ করে দিয়েছে। এরপর লাশ নিয়েও নাটক করেছে।
তিনি মীর মুগ্ধের কথা স্মরণ করে আবেগ প্রবণ হয়ে উঠেন এবং বলেন, একটা ছেলে কঠিন দিনগুলোতে পানির কেইন হাতে নিয়ে বলেছিল- পানি লাগবে ভাই, পানি? তাকেও শেষ করে দিলো। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হলো। হত্যা করা হলো আমার একটা যুবতি বোন সুরাইয়াকে খুন করা হলো। দুই মাসের একটা অবুঝ সন্তান তিনি দুনিয়াতে রেখে গেছেন। আমি তাকে দেখতে গেলাম। সবার প্রশ্ন এই বাচ্চাটা বড় হয়ে কা কে মা ডাকবে? একই রকমের প্রশ্ন পোশাক কর্মীর স্ত্রীর। তিনি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তার স্বামী নিহত হয়েছে আন্দোলনে। তার গর্বের সন্তানের কি হবে?
এসব পরিবারের পাশে জামায়াতে ইসলামী দাঁড়িয়েছে জানিয়ে জামায়াতের আমীর বলেন, কেন আমাদের সন্তানেরা বুক পেতে নেমেছিল? তাদের একটাই স্লোগান ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। আমরা স্বাভাবিক ন্যায়বিচার চাই, বৈষম্য চাইনা। আমরা সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে, আমরা দখলদারির বিরুদ্ধে. আমরা ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে, আমরা দু:শাসনের বিরুদ্ধে। এই স্লোগান নিয়ে যারা রাস্তায় নেমেছিল। সরকারকে আমরা বলছি যে আমাদের আহত এবং পঙ্গু সন্তানদের সবার আগে সুস্থ করে তুলুন, যাদের বিদেশে পাঠানোর তাদের দ্রুত ব্যবস্থা করুন।
তিনি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, গণভবনে রান্না করা খাবার ছিলো। কিন্তু সেই রান্না মুখে উঠে নাই। তিনি কোরআনের আয়াত শুনিয়ে বলেন আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন। যার কাছ থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা কেড়ে নেন। যাকে ইচ্ছা সম্মান দান করেন আর যাকে ইচ্ছা লাঞ্চিত করেন।
তিনি বলেন, এই দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান আলেম ওলামাদের তারা কত বেইজ্জত করেছে। পায়ে বেড়ি আর হার হাতে হ্যান্ডকাপ দিয়ে এক জেল থেকে আরেক জেলে নিয়েছে। জেল থেকে কোর্টে তারা টানাটানি করেছে। তাদের অনেককে তারা খুন করেছেন গুম করেছেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের দেশপ্রেমিক সন্তানদেরকে হাতুরি বাহিনী পাঠিয়ে গুলি চালিয়ে তারা খুন করেছেন। আমাদের মেয়েদের তারা ছাড় দেয়নি। তারা আবার ফিরে আসবে। কেউ কেউ বলে আগামি নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করতে পারবে কি-না।
তিনি প্রশ্ন রাখেন নির্বাচন কার জন্য? নির্বাচন তাদের জন্য যারা মানুষকে সম্মান করে। নির্বাচন তাদের জন্য যারা দেশবাসীকে ভালবাসে। নির্বাচন তাদের জন্য যাদের কাছে দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটি আমানত। এই বিশ্বাস আস্থা যাদের মধ্যে পাওয়া যায় নির্বাচন তাদের জন্য।
আওয়ামী লীগ পরপর তিনটি নির্বাচনে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য তান্ডব চালিয়েছে। আমরা কি ভুলে গিয়েছি? প্রশ্ন করেন জামায়াতের আমীর। সমস্বরে জবাব আসে, না। যারা নির্বাচন বিশ্বাস করেনা তাদের আবার কিসের নির্বাচন?
তিনি বলেন, আমরা চাই অতি জরুরি সংস্কার সাধন করে বর্তমান সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিয়ে তারা যার যার জায়গায় চলে যাবেন। এই নির্বাচনে জনগণ যাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে, তাদের ওপর দেশের দায়িত্বটা দিলে তারা দেশের মানুষকে সম্মান করবে, ভালবাসবে। দেশের মানুষের আমানত পাই পাই করে হিসাব রাখবেন। চুরি করে দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করবেন না। যেমনটি গত সাড়ে ১৫ বছর করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার হিসেব অনুযায়ী ২৬ লক্ষ কোটি টাকা কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আবার কী সেই সংস্কৃতি জনগণ মানবে?
তিনি বলেন, এই সংস্কৃতি যারা চালু করে নাই, যারা জাতির সাথে দুঃখ কষ্টে লেগে আছে, মানুষের সম্পদের ওপর হাত দিচ্ছে না, ইজ্জতের ওপর হাত দিচ্ছে না। জীবনের ওপর হাত দিচ্ছে না। আস্থাটাতো তাদের ওপরই রাখতে হবে, তাই না? এই দল কোনগুলো? এদের খুঁজে বের করে তাদের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। এরা যখন জনগণের কাছে আসবে, জনগণের উচিত হবে বুকের উষ্ণতা দিয়ে তাদের জড়িয়ে ধরা। যে আমরা আপনাদেরকেই খুঁজছি। দল হোক জোট হোক তাদের খুঁজে বের করে দেশের কল্যাণ করার সুযোগ দিতে হবে।
বাজার মূল্য মানুষের নাগালে আনার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এখনো আওয়ামী সিন্ডিকেট বিভিন্ন জায়গাতে বসে আছে। কেউ কেঊ বলছে, পুরনো সিন্ডিকেটের জমিদারি নতুন জমিদারের হাতে চলে গেছে। আমরা বাজারে নতুন কিংবা পুরাতন সিন্ডিকেট দেখতে চাই না। মানুষের ওপর এই জুলুম বন্ধ করতেই হবে।
তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, আমরা এমন একটা দেশ চাই, যেখানে পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন চাই না। টুকরা টুকরা জাতি চাই না। আমরা মাইনরিটি মেজরিটি শব্দই শুনতে চাই না। এখন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকেরাও বলেছে এই কথাগুলো বলেই বলেই আমাদের শোষণ করা হয়েছে। আমরাও চাই না। নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই দেশকে গড়ে তুলবো। নারীদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে। তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। তারা নিরাপদভাবেই ঘরে থাকবেন, বাইরে যাবেন পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। যুবকদের হাত কাজের হাতে পরিণত করবো। সেই অপেক্ষায় আছি। আমাদের লক্ষ লক্ষ বলছেন যে জীবন দিবো দেশের সার্বভৌমত্ব দিবো না। কারো লাল চোখের দিকে আর আমরা তাকাবো না। আমাদের দিকে যদি কেউ লাল চোখ তুলে তাকায় তাও আমরা বরদাস্ত করবো না। আমরা পিন্ডির হাত থেকে মুক্ত হয়েছি অন্য কারো হাতে বন্দি হওয়ার জন্য না। বরং সত্যিকার অর্থে একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার জন্য। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই বৈষম্যহীন মানবিক সাম্যের বাংলাদেশ গড়তে চায়। এটা কী আপনারা সবাই চান? উত্তর আসে হ্যাঁ। মনে রাখবে এটা এমনি এমনি আসবে না। এজন্য আমাদের সন্তানরা যথার্থই স্লোগান দিচ্ছে- আবু সাইদ মুগ্ধ শেষ হয়নি যুদ্ধ। আবু সাঈদদের স্মরণ করে যে স্লোাগান দিচ্ছে এটাই যথার্থ স্লোগান। এই সেøাগান সেইদিন বন্ধ হবে যেদিন এই দেশে ইনসাফ ন্যায়বিচার কায়েম হবে। আমরা সেই দিনটির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। এজন্য আপনাদের ভালবাসা দরকার, দোয়া চাই, সহযোগিতা চাই, ইতিবাচক সমালোচনাও চাই। আমরা বিভেদহীন জাতি চাই। আমরা ঐক্যবদ্ধ জাতি নিয়ে সামনে এগুতে চাই।
মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে বার বার ষড়যন্ত্র হয়েছে। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে ইসলাম এবং ইসলামীর নেতাদের বিরুদ্ধে দেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করেছে। বিডিআর কর্মকর্তাদের হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ফাসি দিয়েছে। শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর নেতাকর্মী ও আলেমদের নির্বিচারে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে জনগণ আন্দোলন করেছে। সবশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন করে। ছাত্রদের মিছিলে গুলি করে হত্যা করে হাজার হাজার ছাত্র মেরেছে। কিন্তু হত্যা করেও এবার পতন ঠেকাতে পারেনি। ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারত গেছে। শেখ হাসিনার আবারও দেশে আসার ষড়যন্ত্র করছে। টুস করে ঢুকে পড়বেন। হবে না। বলে দিতে চাই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরবে না। হাসিনা ফিরবে না। কিন্তু তাকে আনা হবে বিচারের জন্য। যে ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। সেই ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিচার হবে। উঁকি মারার চেষ্টা করছে। আপনারা উঁকি মারবেন তো বিপদে পড়বেন। আর ফ্যাসিবাদ আসতে দিবে না দেশের মানুষ। তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন তালিকা থেকে ভূয়া ভোটারদের বাদ দিতে হবে। নতুন ভোটার করতে হবে। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কথা বলায় কারো কারো গায়ে লেগেছে। তারা আবার রাজাকারের কথা বলে। মনে রাখবেন এদেশের মানুষে আর এই স্লোগান খায় না। একথা বলে শেখ হাসিনা পালিয়েছে। সুতরাং সাবধান। আগামির বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ। সরকার যদি উদ্যোগ নেয়, আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে সরকারকে সাহায্য করবো। এদেশের মানুষও সাহায্য করবে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের নাটোর জেলার সমন্বয়ক শেখ ওবায়দুল্লাহ মীর বলেন, ১৬ বছর আগে মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর সাহেবের একটি কথাই মনে পড়ে, তিনি বলেছিলেন, বাংলার আকাশে আজ অন্ধকারের ঘনঘটা। সুবহে সাদেক হতে অনেক সময় লেগে যাবে। সেখান থেকে বের হতে ১৬ বছর লেগে গেছে। এখন আমাদের শ্লোগান দুইটা। নারায়ে তাকবীর আর ইনকিলাব জিন্দাবাদ। শেষে বলবো আমাদের পথ ‘ইহদিনাস সিরত্বল মুসতাকিম।’ সহজ-সরল পথ। ইসলামিক শাসন আমাদের কামনা। এই দেশে যেন ইসলামী শাসনের পতাকা তলে আসে।
অধ্যক্ষ মো.শাহাবুদ্দিন বলেন, ১৯৫৬ সালে কোরআনের সংবিধান চালু হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের গভর্নমেন্ট স্পিকার শাহেদ আলীকে হত্যা করেছিল। এই পরিবেশ বিঘিœত হওয়ার কারণে ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ জারি করেছিল আইয়ুব খান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা জামায়াতে ইসলামী করে নাই। দেশের স্বাধীনতা এবং স্বার্থের জন্য কাজ করেছে সেদিন। আমাদের নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে ইসলামের জন্য। তিনি বলেন, এই জমিন আল্লাহর। জামায়াতে ইসলামী এখানে ইনসাফ ভিত্তিক দেশ গঠন করতে চায়। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি, কেউ কিছু করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।
জনাব মোবারক হোসেন বলেন, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তান্ডমের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি করেছিল। তার সমাপ্তি ঘটেছিল পলায়নের মাধ্যমে। শেখ হাসিনাও পালিয়ে গেছেন। পৃথিবীতে আর কোনো স্বৈরাশাসক এভাবে পালায়নি। আবার মাঝে মাঝে তিনি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছেন, বলা হচ্ছে তিনি বাংলাদেশে চট করে ঢুকে যাবেন। ওনাকে চট করে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ওনাকে এনে খুনের বিচার করা হবে। তিনি ইসলামী আন্দোলনের রাহবারদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছিলেন, জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে আমাদের রাহবারদের হত্যা করেছেন। ওনাকেও দেশে এনে বিচারের মাধ্যমে সেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে। আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ কায়েম জামায়াতে ইসলামীর পক্ষেই সম্ভব।
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব টেকাতে নারায়ে তাকবীর এবং কালেমার পতাকার আওয়াজের সাথে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এজন্য সবাইকে এক সাথে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, ছাত্রজনতা ভারতের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরেছে। ভারত চেয়েছিল হাসিনাকে দিয়ে বাংলাদেশকে অঙ্গরাজ্য বানাতে। কিন্তু পারেনি। কিছুদিন আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হাসিনা পালাতে বাধ্য হয়েছে। আর কোন দিন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে প্রয়োজনে জীবন দেবো।
ড. কেরামত আলী বলেন, কর্মী সম্মেলন প্রমাণ করে দেশের মানুষ ঈমানি চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে চায়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কোরআনের আলোকে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায়। এজন্য প্রতিটি কর্মীকে প্রতি মুহূর্তে কাজ করে যেতে হবে।
মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সাল আমাদের এই বার্তা দেয় যে, একটি দাসত্বমুক্ত বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে হলে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নাটোর জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন খান, নায়েবে আমীর ও নাটোর-নলডাঙ্গা সদর-২ আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী, বাগাতিপাড়া লালপুর আসন-১ এর এমপি প্রার্থী মাওলানা মো. আবুল কালাম আজাদ, বড়াইগ্রাম গুরুদাসপুর-৪ সংসদীয় আসনে জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী অধ্যাপক আব্দুল হাকিম, নাটোর জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আফতাব উদ্দিন। এদিকে বিকেলে তিনি জেলা পরিষদের অনিমা চৌধুরী অডিটরিয়ামে এক সুধী সমাবেশে মতবিনিময় করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান।